ওসমান গনি
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:-
কুমিল্লার চান্দিনার বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে সেই সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়। উৎপাদিত টমেটো, বেগুন, লতি, লাউসহ বিভিন্ন সবজি দেশের বাইরেও রপ্তানী করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এ উপজেলার সাথে অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ায় এ উপজেলার সবজি একেবারে সতেজ থাকতেই অন্যত্র পৌঁছে যায় কম সময়ে। উপজেলা কৃষি বিভাগ এমন সুখবর জানাচ্ছে।
ফলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুঁটিয়ে তোলার অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
চলতি মৌসুমে অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এখানে চাষাবাদ হবে করোলা, পুঁইশাক, লালশাক, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাটা, কলমি শাক, লাউ, টমেটো, সিম, বেগুন, বরবটি সহ বিভিন্ন সবজি। সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভার বিভিন্ন গ্রাম, এতবারপুর ও বরকইট এলাকায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন সবজির চাষ সম্পন্ন হতে দেখা গেছে। এছাড়া বীজতলা তৈরীর কাজও চলছে পুরোদমে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম জানান, এবছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ফসলী মাঠে ১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশই চাষ হয় বিভিন্ন প্রজাতির টমেটো। তিনি আরও জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ২৬০ হেক্টর জামিতে সবজি চাষ সম্পন্ন হয়েছে। চান্দিনায় উৎপাদিত টমেটোর রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সে অনুযায়ী বিপননও হয়। শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ উপজেলার কৃষকরা। বৃষ্টির কারণে প্রথম ধাপে আগাম সবজি চাষ ব্যহত হলেও এখন পুরোদমে চলছে গাছ রুপন এবং বীজ বপণের কাজ। ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার আশায় পুরোদমে কাজ করে চলেছেন তারা।
উপজেলার এতবারপুর, চিলোড়া, এওয়াজবন্দ, আলীকামোরা, মাইজখার ও নরসিংপুর এলাকায় চাষীদের কৃষি কাজে ব্যস্ততা দেখা গেছে। কেউ গাছের চারা রুপন করছেন, কেউ বা চারা রুপনের জন্য চাষের জমি তৈরি করছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবছর বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে অনেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিভিন্ন বালাইনাশক ও কীটনাশক ঔষধ জমিতে ব্যবহার করার পরে বৃষ্টির পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে ভালো দাম থাকলে সে ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
মাইজখার গ্রামের টমেটো চাষী মো. শরীফ মোল্লা বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২০-২৫ দিন দেরিতে টমেটোর চারা লাগানো হয়েছে। মূলত বৃষ্টির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এর কারণে ফসল আসতেও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার একটু সময় বেশি লাগবে। আলিকামোড়া গ্রামের মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, ৩৬ শতাংশ জমিতে প্রথম বার চারা লাগানোর পর বৃষ্টির পানিতে গাছ ডুবে যাওয়ার কারণে অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার নতুন করে চারা লাগিয়েছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে, আবহাওয়া ভালো থাকলে লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
মেহার গ্রামের মো. সোহাগ মিয়া বলেন, ৩০ শতাংশ জমিতে লাউ লাগিয়েছি। পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকলে লাভবান হবো বলে আশা করছি।
তিতপুর গ্রামের আলী আশ্রাফ বলেন, ২৪ শতাংশ জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ভালো আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ভালো ফলন হবে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার বলেন, এখানকার কৃষকরা নিজেরাই বীজতলা তৈরী করেন। আবার অনেকে নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করেন। অনেক জমি তৈরী হচ্ছে। নভেম্বর-
ডিসেম্বর মাস জুড়ে ব্যাপক চাষাবাদ হবে।
চান্দিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, সরকারিভাবে সবজি চাষীদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের উফসী এবং হাইব্রিড সবজি বীজ, রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। বালাই নাশক, পোকা মাকড় দমন সহ বীজতলা তৈরীর বিষয়ে কৃষকদেরকে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণও প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, চান্দিনায় উৎপাদিত টমেটো, বেগুন, লতি, লাউসহ বিভিন্ন সবজি দেশের বাইরেও রপ্তানী করা হয়। এটা অত্যন্ত আশা জাগানো খবর।