এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ-
বাড়ির পিছনে পরিত্যক্ত ৭ শতাংশ জায়গায় লাউ চাষ করে সফল হয়েছে কৃষাণী রতনা রানী রায়(৪৭)। লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের শ্রী অমল চন্দ্র রায়(৬৫) স্ত্রী, তিনি অসুস্থ স্বামীর সেবা যত্ন করার পাশাপাশি তিনি ধানের চাষ আবাদ ও সেই সাথে লাউ চাষ করেছেন। লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকার মত। এখন বাজারে সবজির পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় তিনি আড়াই সপ্তাহে প্রায় ৩’৫০০ টাকার লাউ বিক্রয় করেছেন। আরও ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাউ বিক্রয় করার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সবজি চাহিদা থাকলে তার খরচ বাদে সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার টাকার বেশি হতে পারে ।
রতনা রানীর কম খরচ ও অল্প সময়ে এমন লাভের হিসাব দেখে লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষক ও কৃষাণীদের। তাছাড়াও
একজন সফল ধান চাষী হিসেবে রতনা রানীর
এলাকায় মোটামুটি বেশ সুনাম রয়েছে।
এবার মাত্র প্রায় দুই মাসের মধ্যে লাউ চাষে অভাবনীয় লাভ পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষাণী
রতনা রানী, বাড়ির পিছনে বাঁশের ঝাড়ের সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় লাউয়ের
মাচায় ঝুলছে লম্বা ও সবুজ রঙের এসিআই (ময়না) জাতের অসংখ্য লাউ। ঝুলন্ত এসব সবুজ রঙ্গের লাউ দেখলে যে কোন মানুষের চোখ জুড়িয়ে যাবে। রতনা রানী বলেন,
ওজন ভেদে প্রতিটি লাউ খুচরায় ৪০-৬০ টাকা এবং পাইকারী ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেছি।
লাউয়ের ক্ষেতে জৈব সারের সাথে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি।
তাছাড়া তেমন কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি আরো বলেন , বিষমুক্ত সবজি খেতে যেমন সুন্দর তেমনি বাজারেও রয়েছে তুলনামূলকভাবে চাহিদা বেশি।
রতনা রানীর স্বামী অমল চন্দ্র রায় বলেন, কিছুদিন যাবত অসুস্থ আমি ,যার কারণে আমার স্ত্রী, সংসার সামলানোর পাশাপাশি চাষাবাদ করে থাকে ,এই জায়গায়
লাউয়ের চাষাবাদ করে ভালোই ফলন পেয়েছে ।এবার বাজারে তরিতরকারির দাম বেশি থাকায় লাউয়ের দামও ভালোই পেয়েছি। তিনি বলেন; সবজি উৎপাদনে আমাদের জন্য সরকারিভাবে যদি আত্মিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের মতো গরিব কৃষকদের সবজি উৎপাদনে চাহিদা আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়,
বর্ষাকালীন শাক সবজি খরিপ-২ মৌসুমে লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোট ১০৯০
হেক্টর জমিতে শাক সবজি আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে লাউয়ের চাষাবাদ হয়েছে প্রায় ১৮৮ হেক্টর জমিতে। তিনি আরো বলেন, মূলত
এসিআই জাতের (ময়না) লাউ ৪৫ দিনের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৬০ দিন পর এ লাউ কর্তন করা যায়। সঠিক পরিচর্যায় করলে ১২০-১৫০ দিন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আমাদের কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, ডঃ মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, খরিপ -২ মৌসুমে জেলায় ৩৩১০
হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ আবাদ হয়েছে এবং ২৯৬৮ হেক্টর জমির ফসল
কর্তন করা হয়েছে। সেইসাথে আগাম ( রবি) শাকসবজি ১৭০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন প্রায় সারা বছরেই সবজির চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে কৃষকরা জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে, সেই সাথে লাউয়ের আবাদে অনেক কৃষক বাম্পার ফলন পেয়েছে । আর বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় কৃষকরা নায্য দামে লাউ বিক্রি করতে পেরে লাভবান হয়েছে।