মোঃ আবদুল আলীম খান
শীতের আমেজ বেশ কিছুদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে। তবে গত দু'দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এতে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ফুটপাতগুলোতে বেড়েছে গরম কাপড়ের বেচাকেনা। হঠাৎ বেড়ে যাওয়া শীত নিবারণের জন্য যার যার সাধ্যমতো কিনছেন গরম কাপড়।
ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে আসা ক্রেতার মধ্যে বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ। তবে শীতবস্ত্র বিক্রয় করা এসব ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে আসছেন নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে রিকশা ভ্যানে করে গরম কাপড়ের পশরা সাজিয়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করছেন কিছু ভ্রাম্যমাণ মৌসুমি ব্যবসায়ী। প্রতিবছরই তারা শীতের এই সময়টায় শীতবস্ত্র বিক্রি করে থাকেন। গত দু'দিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ভ্রাম্যমাণ এসব গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে কয়েকদিন আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। এসব দোকানে ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যে যার চাহিদা অনুযায়ী দরদাম করে কিনছেন শীতবস্ত্র। সকাল থেকে রাত ৮টা বা ৯টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
অধিকাংশ ক্রেতা বলছেন, মার্কেটের গরম কাপড়ের দাম আকাশচুম্বী। ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের পোশাকের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। যে কারণে অনেকেই ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে শীতের পোশাক কিনতে আসেন। সাধারণত এসব ফুটপাতের দোকানগুলোতে নিম্নআয়ের মানুষই বেশি আসেন।
শীতবস্ত্র কিনতে আসা মালু মিয়া বলেন, আমরা দিনে আনি দিনে খাই। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। শীতকালে আমাদের খুব কষ্ট হয়। বেশি শীত পড়লে আমরা রাস্তার পাশের দোকান থেকেই সবসময় গরম কাপড় কিনি। এ বছর গত দুইদিন শীত বেশি পড়ায় আজকে পরিবারের সদস্যদের জন্য শীতের গরম কাপড় কিনতে এসেছি।
বাছির মিয়া নামের অন্য এক ক্রেতা বলেন, কিছুদিন যাবত হালকা শীত পড়ছে। তবে গত দুই দিন খুব শীত পড়েছে। তাই শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। আমার বৃদ্ধা মায়ের জন্য ও বাচ্চাদের জন্য শীতের গরম কাপড় কিনেছি। দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। তবুও মার্কেটের দোকানগুলো থেকে ফুটপাতের এসব ভ্যানের গরম কাপড়ের দাম অনেক কম।
রিকশা ভ্যানে ফেরি করে শীতবস্ত্র বিক্রি করা দোকানি জামাল হোসেন বলেন, শীতের এসব গরম কাপড় আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন বাজার ও বিভিন্ন মোড়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। এ বছর শীতবস্ত্র বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম। বেশ কিছুদিন ধরে গরম কাপড় তেমন একটা বিক্রি। তবে হঠাৎ করে শীত বেশি পড়ায় এ দু'দিন ভালোই বিক্রি হচ্ছে। এভাবে শীতের তীব্রতা থাকলে বিক্রি আরও বাড়বে।
উপজেলার সদর বাজারে ভ্যান গাড়িতে করে শীতবস্ত্র বিক্রি করা দোকানি শাহ আলম বলেন, এবার প্রথমদিকে এমন মনে হয়েছিল শীত তেমন পড়বে না। গতকাল বেশ শীত পড়েছে। আজকে তো সূর্যই দেখা যায়নি। এতোদিন বেচাবিক্রি না হলেও দু'দিন বিক্রি ভালোই হচ্ছে। তবে সব ক্রেতা কিনছেন না, কেউ কেউ নেড়েচেড়ে চলে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে শীত আরও বাড়বে। শীত আরও বাড়লে আমাদের বিক্রিও আরও বাড়বে।
এদিকে শীতজনিত অসুখবিসুখ থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, শীতের এ সময়টায় আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। কনকনে শীতের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা পড়ে। যে কারণে শীতকালে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ শীতজনিত অসুখবিসুখে আক্রান্ত হয়। এ জন্য এ সময়টায় শীতবস্ত্রের বিকল্প নেই। এছাড়াও শীতের অসুখবিসুখ থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
তিনি বলেন, শীতের এ সময়টায় পর্যাপ্ত গরম কাপড় এবং হাতে পায়ে মোজা পরিধান করতে হবে। ঘন কুয়াশায় মুখে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শীতের এ সময়টায় কুসুম-গরম পানি পান করতে হবে। বাইরের খোলা খাবার পরিহার করতে হবে। অন্যথায় শীতজনিত নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আজিজুর
রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : মাহফুজুর
রহমান