মোঃ আতাউর রহমান
বাগমারা রাজশাহী প্রতিনিধি:-
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ট্রেনের আদলে বিদ্যালয়টির নাম ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাস্তবে বিদ্যালয়ে কোন রেলগাড়ি নেই। তবে ১৯৬৭ সালে নির্মিত চারটি কক্ষকে রং-তুলির আঁচড়ে সম্প্রতি রেলগাড়ির রূপ দেওয়া হয়েছে। এর একটি গ্রন্থাগার, অন্য তিনটি শ্রেণিকক্ষ। এই শ্রেণিকক্ষ ভীষণভাবে উপভোগ করছে শিক্ষার্থীরা।
অথচ কয়েকবছর আগেই এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন ইটের দেয়াল আর টিনের ছাউনির সেই ঘরে ক্লাস করতে মন খারাপ হতো শিশুদের।
এখন শুধু পরিত্যক্ত এই ভবনটি শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়ই হয়ে ওঠেনি। প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুনের হাতের ছোঁয়ায় পুরো স্কুলটিই বদলে গেছে। পরিপাটি করে সাজানো-গোছানো এ স্কুলে এখন ঝরে পড়ার হার শূন্য। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে স্কুলটি। রেলগাড়ির আদলেে পুরনো ভবনটিকে সাজিয়ে তোলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে প্রশংসায় ভাসছেন প্রধান শিক্ষক।
পুরো ক্যাম্পাসটি যেন একটি শিশুপার্ক। ফুলের বাগানে পশুপাখির ভাস্কর্য। শিশুদের জন্য আছে দোলনা। অফিসকক্ষের সামনে সুন্দর একটি মঞ্চ। ছোট্ট মাঠের পুরোটিতেই দৃষ্টিনন্দন টালি বসানো। সবগুলো শ্রেণিকক্ষই সাজানো-গোছানো। দেয়ালগুলো রঙিন ফুলে-ফলে। কাগজের ফুল দিয়ে শ্রেণিকক্ষ সাজিয়ে রেখেছে শিক্ষার্থীরাই। বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকের পুরনো টিনশেড ভবনটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে রেলগাড়ির আদলে। ভবনের ওপরে ‘কলকাকলি স্টেশন’ লেখা সাইনবোর্ড। রেলগাড়িটির নাম লেখা হয়েছে ‘জ্ঞানের আলো এক্সপ্রেস’। গন্তব্য ‘ধাদাশ টু মহাকাশ’।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বললেন, ‘বিদ্যালয় থেকে ঠিক কতদূর যাওয়া যায়, সে ভাবনায় মনে হয়েছে মহাকাশই সবচেয়ে দূরের গন্তব্য। তাই রেলগাড়ির গন্তব্য সেটিই লেখা হয়েছে।’
স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত ১৯৬৭ সালে। তখনই পুরনো এই ভবনটি নির্মিত। এর ওপরে টিন। পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও শ্রেণিকক্ষ সংকটে এখানেই তিনটি কক্ষে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। রং উঠে অনেক আগেই দেয়ালগুলো মলিন হয়ে যায়। এ নিয়ে বাচ্চাদের মন খারাপ হতো। তারা প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে বলে, সামনের দুটি ভবনে ছাদ আছে, তাদের নেই। তাদের শ্রেণিকক্ষগুলোও যেন সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে প্রধান শিক্ষক মিস্ত্রি ডেকে এনে রং-তুলিতে করে ফেললেন জাপানি লেখক তেৎসুকো কুরোয়ানাগির তেত্তো-চান বইয়ের সেই রেলগাড়ি-ক্লাস!
এখন তিনটি শ্রেণিকক্ষ যেন রেলগাড়ির একেকটি কামরা। এ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেঘা যখন জানালার পাশে দাঁড়ায়, তেত্তো চানের মতো তারও বুকটা দুমদুম করতে থাকে। এখানে পড়া মানে তেত্তো চানের মতো তারও মনে হয় সারাক্ষণ কোথাও না কোথাও থাকা। স্কুলের আঙিনার ফুল কিংবা বারান্দার টবে ঝুলন্ত পাতাবাহারের পাতাগুলো নড়ে বলে তারও মনে হয় ট্রেনটা চলছে।
প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, ‘আমরা পুরস্কার পাব, সে আশায় কোন কাজ করিনি। স্কুলের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমেই আমরা এসব করেছি। সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে সব স্কুলই এভাবে কাজ করতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষার একটা লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করা। আমরা সেই কাজটিই করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আজিজুর
রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : মাহফুজুর
রহমান