নির্বাচনী হাওয়া বইছে নীলফামারী -৩ (জলঢাকা) সংসদীয় আসনে । এ আসনটি আওয়ামীলীগের দূর্গ বলে পরিচিত। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আসনটি রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে জাতীয়পার্টি। তবে এবার এ আসনটি আওয়ামীলীগ কোন অবস্থাতেই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে রাজী নারাজ। তারা চান স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দলীয় প্রার্থী।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে ঘিরে এ আসন। নির্বাচন কেমন হবে, কোন দল অংশ নেবে, কারা বর্জন করবে এসব বিষয় পরিষ্কার না হলেও সম্ভাব্য সকল দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
আর এ নির্বাচনে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। এবং দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ আসনটি বর্তমানে জাতীয় পার্টির দখলে। তবে জোটগত নির্বাচন হলে এ আসনটি আবারও দাবি করছেন জাতীয় পার্টি। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দুইবার এ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়। বাকী সময়টা জামায়েতের কবজায় ছিল। তাই এবার আওয়ামী লীগ এ আসনটি আর জাপাকে ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা চায় দলীয় প্রার্থী।
বিএনপি-জামায়াতও তাদের নিজস্ব প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে প্রচার শুরু করেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা স্থানীয় হলেও কর্মক্ষেত্রে ঢাকায় বসবাস করায় তারা এখানে বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী হিসাবে সাবেক সাংসদ কাজী ফারুক কাদের, বর্তমান সাংসদ মেজর (অবসর প্রাপ্ত) রানা মোহাম্মদ সোহেল ও ডাঃ বাদশা আলমগীর এই আসনে মনোনয়ন চান। নীলফামারী-৩ আসনে বরাবরেই ভোটের বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সব সময় ১ম অবস্থানে থাকে। তবে দলীয় মতভেদের কারনে আসনটি আওয়ামীলীগ থেকে হাতছাড়া হয়েছে কয়েকবার। তাই এবার জোরে শোরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এবারও এ আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে। ইতিমধ্যে এ আসনের নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এম পি গোলাম মোস্তফা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ত্রান ও সমাজ কল্যান সম্পাদক,সাবেক সাধারন সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন পাভেল, আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ববিতা রানী সরকার, বাংলাদেশ টু ডে পত্রিকার সম্পাদক জোবায়ের, এফ বি সি সি আইর সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এনামুল হক রানা
এবিষয়ে সাবেক ছাত্র লীগ সভাপতি ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, গনতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধী মুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে উন্নয়নের প্রতীক নৌকার বিকল্প নেই এই আসনে।এদিকে দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢিমেতালে। এ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট ও পৌর সভাপতি আহমেদ সাঈদ ডিডু চৌধুরী। পৌর বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাঈদ চৌধুরী ডিডু বলেন, আমরা দলকে সুসংগঠিত করতে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্য্যক্রম সেভাবে পরিচালনা করতে না পারলেও ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যদিয়ে পৌরসভার পাশাপাশি পুরো উপজেলার ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। গত পৌরসভার নির্বাচনে বিশাল ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল। এবার এই সংসদীয় আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটি বেগম খালেদা জিয়াকে বিজয় উপহার দিবো ইনশাল্লাহ্। এদিকে জাসদ (ইনু) ১৪ দলের প্রাথী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি আজিজুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ আসনে প্রার্থী জলঢাকা উপজেলা শাখার সভাপতি আমজাদ হোসেন সরকার। তার দলের প্রতীক হাতপাখা মার্কার জনসমর্থন চেয়ে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।আমজাদ হোসেন সরকার বলেন আমরা ধর্মের নামে কোন রাজনীতি করিনা। দেশে প্রচলিত গনতন্ত্র মানুষ দ্বারা রচিত। তাই এই গনতন্ত্রের অধীনে দেশে কোন শান্তি আসতে পারেনা। একমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই শান্তি আসতে পারে। মুসলিম প্রধান এই দেশে সঠিক ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের মাধ্যমে জনসমর্থন প্রয়োজন। তাই আশা করি ইসলাম অনুসারীরা এ নির্বাচনে আমাদের সমর্থন দিবেন। জলঢাকার এ আসনটি যাতে কোনো ভাবেই জাতীয় পার্টিকে দেওয়া না হয় সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের তৃনমুল নেতাকর্মীরা জোড় দাবী জানিয়েছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন ও জাতীয় শ্রমিকলীগ সাধারন সম্পাদক শাহিনুর রহমান মনে করেন জাতীয় পার্টির এমপি এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিল। সে সময় দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে আমরা সবাই ভোটও দিয়েছিলাম জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে। কিন্তু জলঢাকা আ.লীগ নেতাকর্মীরা বর্তমান সাংসদের সময়ে অবহেলিত। এলাকার উন্নয়নে তার কোন ভুমিকা নাই। তার সময় একটি ডিও লেটার সংগ্রহ করতে হয়েছে ঢাকায় গিয়ে। কারণ জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল বহিরাগত। অতিথি পাখি প্রার্থী দিয়ে এলাকায় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দলীয় সাবেক এমপির দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাই যুক্তি সংগত কারনেই এ আসনে আ.লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন চাই আমরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক সারোয়ার হোসেন সাদের “বলেন গত ১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় পর প্রান ফিরে পেয়েছে এ আসনের তৃনমুল নেতাকর্মীর।। সাবেক এমপি যে উন্নয়ন এলাকায় করেছেন তা ৪৭বছরেরও হয়নি। তিনি আরও বলেন জামায়াত অধ্যষিত এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়ে সরকারের চলমান উন্নয়নের এজেন্ডা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বাবু বলেন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যাতে করে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের সন্তানদের কোন ভাবেই যাতে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া না হয় সেদিকে সজাগ থাকার আহবান জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল বলেন, দলীয় মনোনয়ন আমিও চাই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে আমাদের যে কোন ত্যাগ স্বীকার করে নিতে হবে।
উপজেলা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদার রহমান বুলু জানান, এ আসনে জাতীয় পার্টি এখন সু সংগঠিত। তাই লাঙ্গল প্রতীক মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে বিজয় হবে।