মোঃ কাউছার মিয়া।
নরসিংদীর মনোহরদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনন্ত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। তাছারাও ভাঙচুর ও ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান-পাট!
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মনোহরদী উপজেলার চালাকচর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদিন তাঁর নেতা-কর্মীদের নিয়ে চালাকচর বাজারে গণসংযোগ করতে আসেন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয় এবং দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। এসব সংঘর্ষে নিজেদের দোকানপাট ভাঙচুর ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন চালাকচর বাজারের বেশ কয়েকজন নিরীহ-নিরপরাধ ব্যবসায়ী! সংঘর্ষে জয়নুল আবেদীনের ব্যবহৃত গাড়িসহ আরও অন্তত ৩টি গাড়ি ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন: ছাত্রদল নেতা মনিরুজ্জামান ছোটন, মিজানুর রহমান, আ. মোতালিব, মোস্তফা হোসেন, আল আমিন, ফাহিম, রায়হান উদ্দিন শিপন, নাজমুল আলম মিতুল, মোখলেছুর রহমান, আলমগীর হোসেন, আকাশ সহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী। আহতদের মধ্যে ফাহিমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মনোহরদী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি এখনো তেমন কিছু জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি সহ আমার দলের সদস্য সচিব এলাকাতেই নাই। অথচ জয়নুল সাহেব যদি এমন অভিযোগ করে থাকেন তাহলে তিনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
এ বিষয়ে লে.কর্নেল জয়নুল আবেদীন জানান, চালাকচর বাজারে আমার শান্তিপূর্ণ গণসংযোগে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক আমার গাড়ি এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন। হামলায় আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং এ ঘটনায় কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রামে সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নির্দেশে তার ভাতিজাসহ বিএনপির তথাকথিত নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে এই হামলা চালায়। তাছারা এটি নতুন নয়, তারা পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। আশা করছি তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা হবে।’
এই বিষয়ে চালাকচর বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা আমাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্জক্রম পরিচালনা করার সময় হঠাৎ বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় এবং তারা বিনাকারণে ও একদম অযথা এলোপাতাড়িভাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে এবং দোকানপাট ভাঙচুর করে। দোকানপাটের ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ, ফ্রিজের ভিতরে রাখা বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী (বিক্রয় যোগ্য) , দোকানের অন্যান্য মালামাল নষ্ট ও ভাঙচুর করা সহ দোকানের সাটার ভাঙচুর করে। এতে করে নিরীহ নিরপরাধ ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমরা সবাই নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যবসায়িদের উপর এই আক্রমণের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালাকচর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে বন্দী। বকুল ও জয়নাল গ্রুপের সংঘর্ষে আমরা ভীত! বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে আমরা এক পক্ষের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির দুই পক্ষের এসব সংঘর্ষে আমরা আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলার অবকাশ নেই। এসব সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নীতি নির্ধারকদের প্রতি আকুল আবেদন জানানো সহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এই বিষয়ে দলীয় অবস্থান জানতে বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটি সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল সাহেবের সাথে কথা বললে দলীয় অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কখনই সংঘাত-সংঘর্ষের পক্ষপাতিত্ব করে না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁদের সুযোগ্য উত্তরসূরী জনাব তারেক জিয়া তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সবসময়ই এসব কিছু শক্ত হাতে দমন করেছেন এবং তার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ। কারও ব্যক্তিগত দায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কখনোই নেয় নি এবং ভবিষ্যতেও নিবে না। আর তাই সর্বসাধারনকে বিভ্রান্ত না হয়ে জিয়া পরিবার তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানান তিনি। তাছাড়া এই সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন জনাব আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল।
এ বিষয়ে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এ বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।