জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এদেশের লাখ লাখ মানুষ নানা সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত, তাপদাহ ও খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক অংশ ডুবে যাওয়ার সম্ভবনা আছে । অথচ এই ঝুঁকি বৃদ্ধিতে আমাদের ভূমিকা সর্বনিম্ন। তথাপি জাতি হিসেবে নিজেদেরকে সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় রক্ষা কবজ হচ্ছে বৃক্ষরোপন। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে বৃক্ষরোপনের চেয়ে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি আর হতে পারে না। প্রয়োজনের তাগিদে গাছ কাটা হলেও দেশগুলোকে বৃক্ষ রোপণের হার বাড়াতে হবে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, “বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস দূর করতে হবে”। বর্তমান বিশ্বে যে হারে কার্বন নিঃসরণ ঘটছে, তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম করবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাই বায়ু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূর করতে গাছের বিকল্প নেই। সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে মাথায় রেখে দাতা সংস্থা WaterAid এর কারিগরী সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা নবলোক কর্তৃক বাস্তবায়িত WASH4 Urban Poor Phase-II প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃক্ষরোপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এখানেও উল্লেখ্য, WASH4 Urban Poor Phase-II প্রকল্প সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা ইস্যু নিয়ে কাজ করে না। তথাপি এ ভাবনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নবলোক ও WaterAid এর কর্মীরা, খুলনা মহানগরীতে বৃক্ষমেলা চলাকালীন সময়ে নার্সারি মালিক সমিতির সাথে দেখা করে। নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি বদরুল আলম রয়েল তুলনামূলক কম মূল্যে বৃক্ষ প্রদান করার আশ্বাস দেন। এই বৃক্ষ কেনার অর্থ প্রদানে এগিয়ে এসেছে একটি ভলেনটারি সংস্থা ‘আলো’। যারা করোনাকালীন সময় মানুষকে অক্সিজেন সরবরাহ, শিক্ষা সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা সহ বর্তমানে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত রয়েছে । এই পথ পরিক্রমায় খুলনা মহানগরীতে অবস্থিত বিভিন্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এখানে বৃক্ষগুলি স্থায়িত্বের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে, সেই স্থায়িত্বের বিষয়কে মাথায় রেখে গাছের বৃদ্ধিসহ টিকিয়ে রাখার বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সচেতন করা হয়। আলো, নার্সারি মালিক সমিতি, নবলোক, WaterAid এর কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন খুলনা মহানগরীর দুইজন থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও খুলনা জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর ১১ টি স্কুলে বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদসহ ঔষধি, ফলজ ও বনজ ১৩৫ টি গাছ লাগান হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আজিজুর
রহমান
নির্বাহী সম্পাদক : মাহফুজুর
রহমান