বিপাকে সেবা প্রার্থীরা…(মহেশ খালী প্রতিনিধি)
গোমড়া মুখ নিয়ে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষেদ ঝাড়ছিলেন ধলঘাটা থেকে আসা কয়েকজন সেবা প্রার্থী। বলছিলেন নিজের জমির দাখিলা কাটতে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। ঘুষ না দেয়ায় কাজ হচ্ছে না। তাঁদের কথায় ‘ঠিক ঠিক’ আওয়াজ তুলে সায় দিচ্ছিলেন খাজনা দিতে আসা কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী অন্যান্য সেবা প্রত্যাশীরাও। নামজারি, ডিসিআর, খতিয়ান ও দাখিলার নামে এখানে অবাধে চলা ঘুষ-বাণিজ্যের রমরমা অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে তারাও হয়ে উঠেন সরব।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাখঢাক না করেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঝাড়ুদার মীর কাশেম, তার ভাগিনা মালেক কম্পিউটার অপরেটর, ঘুষ-দুর্নীতির ‘রসের হাঁড়িতে মজে অনিয়মকে রূপ দিয়েছেন নিয়মে! আর এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। উপজেলার মাতারবাড়ী ভূমি অফিস যেন ঘুষ বানিজ্যের উর্বর ভূমি।
জানাগেছে, তহসিলদারের বাড়ি চট্টগ্রাম হওয়াতে অনেক সময় তিনি কর্মস্থলে সরকারি বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যাওয়া আসার কারণে অনুপস্থিত থাকার সুবাদে অফিসের ঝাড়ুদার মীর কাসেম নিজে অফিস সহায়ক পরিচয় দিয়ে অফিসে কাজে আসা গ্রাহকদের কাজ সম্পাদনের বিষয়ে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন। দীর্ঘ কয়েক দিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই ভূমি অফিসে সেবা প্রার্থীদের হয়রানির চিত্র।
ভূমি অফিসকে ঘিরে ঝাড়ুদারের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ভূমি অফিসের চৌহদ্দিতে এ চক্রের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেশ সরব। অফিসের টাইমের বাইরে রাতে বিভিন্ন দাখিলা ও খতিয়ান সংক্রান্ত কাজ করেছেন তহসিলদারের যোগসাজসে ঝাড়ুদার নিজেও। এতে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারী ফি থেকে দুই তিন গুণ টাকা। বলতে গেলে টাকা দিলে সব হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোক্তভোগি জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় ঝাড়ুদার তহসিলদারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ভূমি অফিসের সব ধরনের কাজ ঝাড়ুদার ও তার ভাগিনা নিজ হাতে করতে কোনো বাধা নেই। এ কারণে সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী একজন ঝাড়ুদারের কাজ অফিস পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা। সেখানে চেয়ার টেবিলে বসে খাজনা ও খতিয়ানের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করায় হতবাক সেবা প্রার্থীরা।
তথ্যসুত্রে, ঝাড়ুদার মীর কাসেম অল্প বেতনে চাকরি করে গ্রামে নির্মাণাধীন বাড়িটি সবার চোখ জুড়াচ্ছে। ভবন দেখে প্রশান্তি পেলেও এটি গড়ার উৎস সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে কপাল ভাজ করেছেন পাড়া প্রতিবেশি।
অপরদিকে ভূমি অফিসের কর্তাদের আস্কারা পেয়ে অঘোষিতভাবে কম্পিউটারম্যান ঝাড়ুদার মির কাসেম এর ভাগিনা হওয়ার সুবাদে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এবং কোনো প্রকার নীয়মনীতি তোয়াক্কা করছে না। দালালদের সাথে গভীর সম্পক সখ্যতা থাকায় দাখিলা থেকে শুরু করে খতিয়ানের কন্ট্রাক নেয় বলে জানাগেছে।
তবে দূর্নীতি দমন কমিশন দুর্দক কর্মকর্তারা মাতারবাড়ী ভূমি অফিসকে বিশেষ নজরদারিতে রাখছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।
এবিষয়ে মাতারবাড়ী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) চন্দন কুমার বলেন, খাজনা দিতে সরকারি নিয়মের বাইরে কোন টাকা নেওয়া হয়না।